This blog is also in English: 'Signage language: helping Rohingya refugees find their way.'
বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আমরা যে প্রশ্নটি করেছিলাম সেটি হলো:
“ওনে কি কেমফোর মদোতোর ঘরোর সাইনবুধগইন বুজোন্নে? ”
এই প্রশ্নটির অর্থ কি তা বুঝতে সমস্যা হচ্ছে?
আসলে, শুধু আপনারই সমস্যা হচ্ছে এমন নয়। এই প্রশ্নটি করেছি, তার মধ্যে ৮০% এরও বেশি লোকের এ প্রশ্নটির উত্তর দিতে সমস্যা হয়েছে, কিন্তু সেটি অন্য একটি কারণে।
একটু পরে আমরা আবার এই প্রশ্নটি দেখব। তার আগে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে সাক্ষরতার হার কত তা জানা দরকার। রোহিঙ্গা একটি মৌখিক ভাষা, এবং যে কোনো বর্ণমালা ব্যবহার করেই লিখিত রূপে এ ভাষার ব্যবহার অত্যন্ত সীমিত; অংশত এ কারণে সাক্ষরতার হার এত কম। সম্প্রদায়টির মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ভাষা হচ্ছে ইংরেজি, এমনকি ইংরেজির ক্ষেত্রেও আমরা সম্প্রতি যাদের সাথে কথা বলেছি তাদের মাত্র ৩১% এ ভাষাটি পড়তে পারে। আর তাদের ইংরেজি জ্ঞানও প্রাথমিক পর্যায়ের, কারণ যারা পড়তে জানেন তাদের প্রায় অর্ধেকই কেবলমাত্র সংখ্যা বা বর্ণ চেনেন। এই কারণে সাইনবোর্ড ব্যবহার করে তাদের কোনো তথ্য জানানো খুবই কঠিন। যে সব মানুষের তথ্য জানা প্রয়োজন, তাদের এমন ফরম্যাটে তথ্য দিতে হবে যা তারা বুঝতে পারে। কিন্তু লিখিত ভাষা পড়তে না পারার এই অবস্থা যদি পশ্চিমা ধরনের গ্রাফিক্স বা ছবির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হয়? অর্থাৎ রোহিঙ্গাদের কাছে যদি তীর চিহ্ন, ইমোজি বা পিক্টোগ্রামগুলো ফরাসি বা জাপানি ভাষার মতোই কঠিন মনে হয়? তাহলে চিত্র ব্যবহারের মানদণ্ড এবং শব্দ কোনোটিই ব্যবহার না করে আমরা কিভাবে মানুষকে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য ছবিভিত্তিক সংকেত ও চিহ্ন ব্যবহার করবো?
এখন দেখা যাক আমাদের প্রশ্নটি কী ছিল?
শুরুতে আপনাদের সামনে যে প্রশ্নটি তুলে ধরা হয়েছিলো – “ওনে কি কেমফোর মদোতোর ঘরোর সাইনবুধগইন বুজোন্নে?’ – যার অর্থ হলো: ‘আপনার ক্যাম্পে বিভিন্ন সেবার জন্য যে সাইনবোর্ডগুলো রয়েছে আপনি কি তা বুঝতে পারেন?”, জরিপকৃতদের মধ্যে ৬৫% (৪০৪ জনের ২৬১ জন) এর উত্তরে জোরালোভাবে বলেছেন “না!”
ক্যাম্পের মধ্যে আপনি… পথ খুঁজে পাবেন (না কি পাবেন না)
বাংলাদেশের কক্সবাজারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে এই সমস্যাটির প্রকৃতি অনুসন্ধান করার দায়িত্ব ছিল ট্রান্সলেটর্স উইদাউট বর্ডারসের (টিডব্লিউবি)। ২০১৭ সাল থেকে এই ক্যাম্পগুলোতে ৮,৫০,০০০ জনেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী বসবাস করছে। এছাড়াও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সহায়তা প্রদানকারী ১৩০টিরও বেশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা ও এজেন্সি এখানে কর্মরত। প্রায় দশ লাখ মানুষ অর্থাৎ পুরো একটা শহরের সমান জনসংখ্যার চাহিদা মেটানো সহজ নয়। যেকোন শহরের মত এই ক্যাম্পগুলোর বাসিন্দাদেরও প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের সেবার প্রয়োজন হয়। কিন্তু এসব সেবার সরবরাহ-কেন্দ্র খুঁজে পাওয়াটা অনেক সময় কঠিন হতে পারে। এখানে স্মার্টফোনে গুগল ম্যাপ বা রাস্তার মানিচত্র দেখার কোনো সুযোগ নেই। এখানের বাসিন্দাদের ইন্টারনেট ব্যবহারের অনুমতি নেই, নেই ক্যাম্প বা রাস্তার বিশদ কোনো মানচিত্র বা ডিরেক্টরি। তাহলে, হয়তো তারা সাইনবোর্ডগুলো দেখলেই পারে। কিন্তু আপনি যদি সেটা বুঝতে না পারেন তাহলে কিভাবে ব্যবহার করবেন?
স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা ক্লিনিক, খাদ্য বিতরণ-কেন্দ্র, তথ্যকেন্দ্র ইত্যাদির মত সেবা ব্যবস্থাগুলো হাজার হাজার ঘরবাড়ির মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এগুলোতে পৌঁছতে হলে সাপের মত আঁকাবাঁকা সহস্র রাস্তা আর অলিগলির গোলকধাঁধা পার হতে হয়। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় সবসময় সরলরেখায় যাওয়া যায় না, গুরুতর অবস্থায় বা জীবন-মরণের প্রশ্নে হাসপাতালে পৌঁছোবার সময়ও নয়। ক্যাম্পগুলো সাইনবোর্ড আর চিহ্নে ভরা থাকলেও সাইনবোর্ডগুলোতে রয়েছে নানা ফরম্যাট, ধরন, রঙ এবং বিভিন্ন ভাষার ব্যবহার, এগুলোর জন্য অনেক ক্ষেত্রেই বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। একটি সমস্যা ক্যাম্পগুলোতে কর্মরত ক্যাম্প ব্যবস্থাপনা কর্মীদের চোখে পড়েছে: ক্যাম্পের অনেক বাসিন্দাই চলাফেরা করতে গিয়ে পথ হারিয়ে ফেলেন। তাঁদের মনে হয়েছে যে, গন্তব্যে পৌঁছাবার জন্য সেখানে স্পষ্ট পথ-নির্দেশক চিহ্নের প্রয়োজন। ক্যাম্পের বাসিন্দাদেরও এ বিষয়ে একই মত।
আমরা কী করেছি?
২০১৯ সালের জানুয়ারিতে, আমরা বের করি যে ক্যাম্পের সাইনবোর্ড বা নির্দেশক চিহ্নগুলোর ক্ষেত্রে সমস্যাগুলো কী। আমাদের লক্ষ্য ছিল স্থানীয় সম্প্রদায়ের সাথে মিলে এমন কিছু নির্দেশক চিহ্ন তৈরি করা যা সেখানকার বাসিন্দারা বুঝতে পারে। এক্ষেত্রে নিম্নলিখিত সেবাব্যবস্থা ও কেন্দ্রের দিকে বিশেষভাবে লক্ষ রাখা হয়েছিল:
- স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র/হাসপাতাল/ক্লিনিক
- তথ্যকেন্দ্র
- মহিলাদের জন্য নিরাপদ জায়গা (সেফ স্পেস)
- শিশুবান্ধব স্থান
- পুষ্টিকেন্দ্র
- খাদ্য বিতরণকেন্দ্র
স্থানীয় সম্প্রদায়ের জানানো চাহিদা ও সুবিধার উপর ভিত্তি করে সাইট ব্যবস্থাপনা এজেন্সিগুলো যেন নির্দেশক চিহ্নের ডিজাইন তৈরির ক্ষেত্রে সমন্বিতভাবে কাজ করতে পারে তা-ই ছিল এই গবেষণার লক্ষ্য। পর্যবেক্ষণের জন্য মাঠ পর্যায়ের পরিদর্শন, ডিজাইন-পূর্ব ও ডিজাইন-পরবর্তী ফোকাস দল আলোচনা (এফজিডি), এবং সাইট ব্যবস্থাপনা সেক্টরের ওয়ার্কিং গ্রুপ ও ক্যাম্পের সব ম্যানেজারদের নিয়ে তৈরি একটি আলোচনা-দল এই গবেষণার অন্তর্ভুক্ত ছিল। আমরা নির্দেশক চিহ্নের প্রোটোটাইপের বোধগম্যতা পরীক্ষা করি, এবং একটি প্রি-পাইলট বেসলাইন স্টাডি পরিচালনা করি।
রঙ, বিষয়বস্তু ও ভাষার ক্ষেত্রে সম্প্রদায়টির পছন্দ এবং নানা রকমের আকৃতি ও লোগো সম্পর্কে তাদের জ্ঞান নিয়ে এফজিডিগুলোতে আলোচনা করা হয়। সময় ও দূরত্ব তারা কীভাবে বোঝে তা এবং বিভিন্ন প্রকার ছবির ক্ষেত্রে তাদের সংশ্লিষ্ট সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতা নিয়েও কথা বলে হয়। গবেষণার এই পুরো সময় জুড়ে গ্রাফিক ডিজাইনারদের সাথে নিয়ে আমরা উন্নত মানের এমন কিছু নির্দেশক চিহ্ন তৈরির চেষ্টা করেছি যা সম্প্রদায়ের সদস্যরা দেখে বুঝতে পারবে।
আরও ভাল নির্দেশক চিহ্ন কতটা দরকার তার পক্ষে-বিপক্ষে মানুষের সংখ্যা কেমন?
গবেষণার বিভিন্ন পর্যায়ে রোহিঙ্গা সম্প্রদায় থেকে জানানো হয়েছে যে, আরও উন্নত মানের নির্দেশক চিহ্ন তাদের প্রয়োজন। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আমরা ক্যাম্পের ৪০৪ জন বাসিন্দাকে প্রশ্ন করি যে তাঁরা ক্যাম্পের সেবা ব্যবস্থাগুলো খুঁজে বের করার সময় বর্তমানে যে সাইনবোর্ড ও নির্দেশক চিহ্নগুলো রয়েছে তা কতটা ব্যবহার করে থাকেন। আমরা দেখি যে –
- ৪৫% উত্তর দিয়েছেন “কখনোই না”
- ১২% উত্তর দিয়েছেন “খুব কম”
- ১৫% উত্তর দিয়েছেন “কম”
- ৬% উত্তর দিয়েছেন “মাঝে মাঝে”
- ৬% উত্তর দিয়েছেন “প্রায়ই”
- ১৬% উত্তর দিয়েছেন “সবসময়”।
সেবা ব্যবস্থার সাইনবোর্ড বা নির্দেশক চিহ্নগুলো পড়তে/অনুসরণ করতে কোনো সমস্যা হয় কি না তাও অংশগ্রহণকারীদের জিজ্ঞাসা করা হয়। এতে দেখা যায় –
- ৬০% উত্তর দিয়েছেন “হ্যাঁ”
- ৫% তাঁদের পরিচিতদের এমন সমস্যায় পড়তে হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন
- ৮৯% জানিয়েছেন যে, ক্যাম্পে আরও ভাল নির্দেশক চিহ্ন থাকলে সেবা ব্যবস্থাগুলো খুঁজে পেতে তাঁদের সুবিধা হবে
- ৯১% বলেছেন যে, আরও ভাল নির্দেশক থাকলে তাঁদের সেবাব্যবস্থা ব্যবহারের সম্ভাবনা বাড়বে।
২০১৯ সালের অক্টোবরে সম্প্রদায়ের ১৭৯ জন সদস্যকে নিয়ে পরিচালিত বোধগম্যতা পরীক্ষায় একই প্রশ্নের জবাবে ৯৭% অংশগ্রহণকারী একই জবাব দিয়েছেন। জরিপটির সময় ৯৯%-এরও বেশি (১৭৯ জনের মধ্যে ১৭৮ জন) জানিয়েছেন যে, আরও ভাল নির্দেশক থাকলে বিভিন্ন সেবা পাওয়াটা তাঁদের জন্য আরও বেশি সহজ বা সুবিধাজনক হবে।
সময়নির্দেশক চিহ্ন বা সাইনবোর্ড
নির্বাচিত ছয় প্রকার সেবাব্যবস্থার জন্য ক্যাম্পে ব্যবহৃত বিভিন্ন ফরম্যাট ও ধাঁচের নির্দেশকের নমুনা আমাদের দল থেকে পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং সেগুলোর ছবি তোলা হয়। সেগুলোতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তথ্য শুধু লেখা হিসাবে দেওয়া ছিল, আর তাও অধিকাংশ ইংরেজিতে আর মাঝে মাঝে সাথে বাংলা এবং/বা বর্মি ভাষায় অনুবাদ। তাৎক্ষণিকভাবেই কয়েকটি প্রবণতা আমাদের দলের চোখে পড়ে:
- সবচেয়ে জনপ্রিয় ভাষা হচ্ছে ইংরেজি
- সাইনবোর্ডগুলোতে একটা বড় অংশ জুড়ে সংস্থাগুলোর লোগো থাকে (বাড়াবাড়ি রকমের বেশি – কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৬টি বড় বড় লোগো রয়েছে এমনও দেখা গিয়েছে)
- তীরচিহ্ন দিয়ে দিক নির্দেশ করা হয়
- নির্দেশক বা সাইনবোর্ডগুলোর আনুমানিক ৮০% ইংরেজিতে লেখা এবং সেগুলোতে কোনো ছবি বা আইকন নেই (সংস্থার লোগো ছাড়া), অথচ পড়তে পারে শরণার্থীদের মাত্র ৩০%
- একটি দিক নির্দেশনা অনুসরণ করে কিছুদূর যাওয়ার পর দেখা যায় সামনের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে আর কোনো সাইনবোর্ড নেই, যার ফলে এই দিক নির্দেশনাগুলো খুব একটা কাজে আসে না
- নির্দিষ্ট করে কোনো সেবাব্যবস্থা বোঝাতে কোনো রকম ছবি বা আইকন ব্যবহার করা হয় না
- নির্দেশক চিহ্নগুলোর মধ্যে মিলের খুবই অভাব, এমনকি দিক নির্দেশনা আর নির্দেশিত সেবা ব্যবস্থাগুলোর চিহ্নের মধ্যেও অসামঞ্জস্য দেখা যায়।
চারটি ক্যাম্পে পর্যবেক্ষণের ফলে আমরা নিশ্চিত হই যে, বেশিরভাগ সাইনবোর্ড বা নির্দেশক চিহ্নের নকশা যেভাবে করা হয়েছে তা রোহিঙ্গাদেরকে—বিশেষ করে, যারা খুব বেশি পড়তে পারে না বা একদমই পারে না তাদেরকে—তথ্য জানাবার জন্য উপযোগী নয়।
গবেষণাটি থেকে আমরা কী জানতে পেরেছি?
সাইট ব্যবস্থাপনা কর্মী, রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের সদস্য এবং গ্রাফিক ডিজাইনারদের সাথে একসাথে মিলে টিডব্লিউবি-র গবেষকরা চিহ্নগুলোর প্রোটোটাইপ তৈরি করে। এসব নির্দেশক কেমন হওয়া উচিত তা সম্পর্কে সম্প্রদায়ের বেশ কিছু পছন্দ আমরা ফোকাস দলের আলোচনা এবং অন্যান্য পরামর্শদাতার সহায়তার মাধ্যমে শনাক্ত করি।
রঙ
- নির্দিষ্ট রঙ প্রায়ই নির্দিষ্ট সংস্থাকে বুঝিয়ে থাকে (যেমন- নীল রঙ জাতিসংঘকে, গোলাপি রঙ ব্র্যাককে বোঝায়)।
- যারা পড়তে পারে না তাদের জন্য নির্দেশক বা সাইনবোর্ডের অর্থ বোঝার সবচেয়ে ভাল বা একমাত্র উপায় হচ্ছে রঙ দেখে চেনা, বিশেষ করে লেখার সাথে যখন কোনো ছবি থাকে না। তাই অন্তত কিছু রঙের ব্যবহার এখানে কাম্য।
- সম্প্রদায় থেকে কালার কন্ট্রাস্ট বা রঙের তীব্রতার পার্থক্যযুক্ত ডিজাইনের প্রতি পছন্দের কথা জানানো হয়েছে — গাঢ় রঙের পটভূমির উপর-হালকা রঙের লেখা/ছবি দেখা/পড়া সহজ হয়।
- চূড়ান্ত প্রোটোটাইপের পরীক্ষার সময় ১০০% অংশগ্রহণকারীই (১৭৯ জন) মূল ছবির চারদিকে রঙিন সীমানা আঁকা থাকলে ভাল হয় বলে জানিয়েছেন।
কোথায় এবং কখন
- ফোকাস দলে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে তীরচিহ্নের প্রতি সন্তুষ্টি দেখা যায় নি।
- তাঁরা জানিয়েছেন যে, আঙুল দিয়ে দিক নির্দেশ করা হলে তা তাঁরা বেশি পছন্দ করবেন।
- চিহ্নগুলোর প্রোটোটাইপের চূড়ান্ত পরীক্ষার সময় অংশগ্রহণকারীদের ৯৩% আঙুলের ছবি দিয়ে নির্দেশিত দিক সঠিকভাবে সনাক্ত করতে পেরেছেন।
- ৭৬% অংশগ্রহণকারী জানিয়েছেন যে, গন্তব্যে পৌঁছে গেছেন বোঝাতে পাশাপাশি খোলা দুই হাতের ছবির পরিবর্তে নিম্নমুখী আঙুলের ছবি বেশি ভালো।
- গন্তব্যে পৌঁছতে কত মিনিট লাগবে তা বোঝানো বেশ কষ্টসাধ্য বলে দেখা যায় – নানা রকম প্রচেষ্টার পরও উল্লেখযোগ্য ফল আসে নি।
- অংশগ্রহণকারীদের সাক্ষরতা অনুযায়ী, চূড়ান্ত প্রোটোটাইপ পরীক্ষায় ৫৪% অংশগ্রহণকারী প্রতিটি গন্তব্য পৌঁছানোর হন্য কতটুকু সময় লাগবে তা বুঝতে পেরেছেন।
ভাষা
বলা বাহুল্য, লেখা শুধু তাদেরই কাজে আসে যারা পড়তে পারে।
- লিখিত ভাষার মধ্যে বর্মি ও ইংরেজি সবচেয়ে বেশি মানুষ বুঝতে পারে।
- সম্প্রদায়টির একটি বিশাল অংশই বাংলা পড়তে পারে না। কর্তৃপক্ষও সাইনবোর্ড বা নির্দেশক চিহ্নে বাংলা ভাষা ব্যবহারের পক্ষপাতী নয়।
ফরম্যাট
জনপ্রিয় নয় এমন ধরনের ছবি;
অংশগ্রহণকারীদের পছন্দ বাস্তবসম্মত আঁকা ছবি
- ছবির নানাবিধ প্রকারের মধ্যে সেবা গ্রহণরত মানুষের বাস্তবসম্মত আঁকা ছবিই সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়।
- প্রোটোটাইপের পরীক্ষার সময় যাঁদের পরামর্শ নেওয়া হয়েছে তাঁদের ৮৩% বলেছেন যে, সাইনবোর্ড বা নির্দেশকে ছবি/কার্টুন এবং লেখা—দুটোর একসাথে থাকাটাই তাঁদের বেশি পছন্দ।
- ৩%-এরও কম কেবল লেখা (বর্ণ/বাক্য) থাকলে ভাল হবে বলেছেন।
- তোলা ছবি (ফটোগ্রাফ) জনপ্রিয়তা পায় নি (৮৯.৪% বলেছেন তোলা ছবি তাঁদের পছন্দ নয়)।
- মানুষের ছবির সরল রূপ (বা ইমোজির মত রূপ) বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে, অংশগ্রহণকারীদের অনেকেই বলেছেন সেগুলোকে তাঁদের ভূত বলে মনে হয়।
- অংশগ্রহণকারীদের নব্বই শতাংশ জানিয়েছেন যে, তাঁরা সাধারণত ছবি দেখে কোনো সাইনবোর্ড বা নির্দেশকের অর্থ বোঝার চেষ্টা করে থাকেন।
অবশেষে উন্নতির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে!
মহিলাদের জন্য নিরাপদ স্থান: আমাদের অন্যতম একটি প্রোটোটাইপ
টিডব্লিউবির গবেষকদের সাথে কর্মরত আমাদের গ্রাফিক ডিজাইনাররা সমাধান হিসাবে এই চিহ্নটি ব্যবহার করতে পরামর্শ দিয়েছেন। ক্যাম্পের রোহিঙ্গা বাসিন্দাদের পছন্দ ও চাহিদার উপর ভিত্তি করে তৈরি ছয়টি নির্দেশকের মধ্যে এটি একটি। এই নকশায় সম্প্রদায়ে পরীক্ষিত সচিত্র যোগাযোগ পদ্ধতি (জীবন্ত চিত্র, আঙুলের সাহায্যে দিক নির্দেশনা) ব্যবহার করার সাথে সাথে যারা পড়তে পারেন তাদের জন্য বর্মি ও ইংরেজি ভাষায় তথ্য সংযুক্ত করা হয়েছে। চিহ্নগুলোকে দেখতে খুব সাধারণ মনে হলেও, এগুলো সম্প্রদায়টির জটিল ও সুনির্দিষ্ট চাহিদাগুলো সামনে রেখে তৈরি করা হয়েছে।
এই চিহ্নগুলির চূড়ান্ত প্রোটোটাইপ পরীক্ষার সময় সম্প্রদায়ের যেসব সদস্যের সাথে কথা বলা হয়েছে তাঁদের সবাই বলেছেন যে, এই ফরম্যাট মেনে ক্যাম্পে সাইনবোর্ড বা নির্দেশক লাগানো হলে তা তাঁদের জন্য সহায়ক হবে (৯৭% “অনেক সহায়ক”, ৩% “সহায়ক”)। চারটি ক্যাম্পে উল্লিখিত ছয়টি সেবা ব্যবস্থার সাইনবোর্ড বা নির্দেশক নিয়ে প্রারম্ভিক পরীক্ষার (পাইলট টেস্ট) প্রস্তুতি চলছে, আর এই ফলাফল পাওয়ার প্রত্যাশিত সময় ২০২০ সালের মাঝামাঝি।
আশা করা যায় এবার রোহিঙ্গা শরণার্থীরা ক্যাম্পের ভেতরে পথ খুঁজে পাবেন!
Peter Squires, Evidence and Impact Officer for the Rohingya Response, Translators without Borders